এখন শীত, শীতের শেষের দিকে আসছে ভ্রমনের মৌসুম। অনেকেই বিভন্ন জায়গায় ঘুরার পরিকল্পনা হয়ত নিয়ে নিয়েছেন। যারা কক্সবাজার যাবেন, পূর্বেই এই জায়গা সম্বন্ধে জেনে নেন।
কক্সবাজার
কক্সবাজার একটি পর্যটন শহর যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্হিত । কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার শহর থেকে বদরমোকাম পর্যন্ত একটানা ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশান।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বৈশিষ্ট হলো পুরো সমুদ্র সৈকতটি বালুকাময়, কাদা অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। বালিয়াড়ি সৈকত সংলগ্ন শামুক, ঝিনুক নানা প্রজাতির প্রবাল, সমৃদ্ধ বিপণি বিতান, অত্যাধুনিক হোটেল মোটেল কটেজ, নিত্য নব সাজে সজ্জিত বার্মিজ মার্কেট সমূহে পর্যটকদের বিচরণে কক্সবাজার শহর পর্যটন মৌসুমে প্রাণচাঞ্চল্য অ উৎসবমুখর থাকে। "New Seven Wonderers Foundation" যা সুইজারল্যান্ডের নামীয় বার্নাড ওয়েবার এর ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ২০০০ সালে ২য় বারের মত বিশ্বের প্রাকৃতিক নতুন সপ্তাশ্চার্য নির্বাচন প্রতিযোগিতায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি কয়েকবার শীর্ষ স্থানে ছিল।

কক্সবাজার চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিঃমিঃ দক্ষিণে অবস্হিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কি.মি.। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র। দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এবং বাসযোগে কক্সবাজার যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অবধি রেললাইন স্থাপনের প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।

ল্যাঃ কক্স (মৃত্যু ১৭৯৮) ছিলেন এর নামানুসারে যিনি ব্রিটিশ আমলে ভারতের সামরিক কর্মকর্তা । তার নাম অনুসারে আধুনিক কক্সবাজারের নাম রাখা হয়েছে। তবে অতীতে কক্সবাজার পানোয়া (আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল) নামেও পরিচিত ছিল। কক্সবাজার এর আরো একটি প্রাচীন নাম হচ্ছে পালঙ্কি।
অনেকেই আছে যারা এই দর্শনীয় স্থান টিতে একবার হলেও আস্তে চায়। যারা প্রথম বার কক্সবাজার যাবেন তাদের কক্সবাজার এর প্রধান দর্শনীয় জায়গা গুলো সম্বন্ধে জেনে নেন। যারা যাবেন অবশ্যই হাতে কমপক্ষে দশ দিন ( এটা খুবই কম সময়, বেশি হলে ভাল হয়  ) নিয়ে যাবেন। যাতে কোন জায়গা ঘুরে আসা বাদ না পরে। কারন প্রতিটি জায়গার আছে ভিন্ন ভিন্ন রুপ বৈচিত্র। চলুন জেনে নেই কক্সবাজার এর প্রধান দর্শনীয় জায়গা গুলোঃ


লাবণী পয়েন্ট
লাবণী পয়েন্ট
কক্সবাজার শহর থেকে নৈকট্যের কারণে লাবণী পয়েন্ট কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত বলে বিবেচনা করা হয়। নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে সৈকত সংলগ্ন এলাকায় আছে ছোট বড় অনেক দোকান যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। সীমান্তপথে মিয়ানমার , থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মার্কেট।
হিমছড়ি
হিমছড়ি
কক্সবাজারের ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হিমছড়ি । ভঙ্গুর পাহাড় আর ঝর্ণা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাওয়ার পথে বামদিকে সবুজঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে। বর্ষার সময়ে হিমছড়ির ঝর্ণাকে অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত বলে মনে হয়। হিমছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় একটি রিসোর্ট আছে যেখান থেকে সাগরের দৃশ্য অপার্থিব মনে হয়। অর্থাৎ এখান থেকে সম্পূর্ণ সমুদ্র এক নজরে দেখা যায়। হিমছড়ির প্রধান আকর্ষণ এখানকার ক্রিসমাস ট্রি। সম্প্রতি হিমছড়িতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট। এক কথায় কক্সবাজার গিয়ে হিমছড়ি না দেখলে কিছুই দেখা হবে না।


ইনানী সমুদ্র সৈকত
ইনানী সমুদ্র সৈকত
দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজারে সৈকত সংলগ্ন আরও অনেক দর্শনীয় এলাকা রয়েছে যা পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণের বিষয়। সৈকত সংলগ্ন আকর্ষণীয় এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছ, ইনানী সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার থেকে ৩৫ কি.মি দক্ষিণে অবস্থিত। অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার থেকে রাস্তায় মাত্র আধঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। পরিষ্কার পানির জন্য জায়গাটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্রস্নানের জন্য উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত।
বিশেষ সর্তকতাঃ প্রতি বছর সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে কিছু মৃত্যুর ঘটনা বেদনায়দক তাই স্নান এর পূর্বে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।


কুতুবদিয়া বাতিঘর
কুতুবদিয়া বাতিঘর
কুতুবদিয়া দ্বীপ’ বিখ্যাত বাতিঘরের কারণে এ প্রবাদটি ছোটবেলায় বিভিন্ন পাঠ্য পুস্তকে লেখা ছিল।
ইদানিং তেমনটি আর লেখা হয় না। কারণ বাতিঘরটি আর কুতুবদিয়াতে নেই। আছে বাতিঘরটির ভগ্নস্তূপ এলাকা নিয়ে গঠিত বাতিঘরপাড়া। কুতুবদিয়া কক্সবাজার জেলায় একটি দ্বীপ উপজেলা। চান্স এন্ড ব্রাদার্স কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃক মনোনীত স্থপতি নেয়ার বার্মিংহাম এর তত্ত্বাবধানে ১৮৪৬ সালের দিকে কুতুবদিয়ার দক্ষিণধুরং ইউনিয়নের আলী ফকির ডেইল নামক স্থানে আটতলা তথা আটকক্ষ বিশিষ্ট বাতিঘরটি নির্মাণ করা হয়। ১২০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট গোলাকৃতি আলোক স্তম্ভের প্রতিটি কক্ষে মূল্যবান কাঁচ খচিত জানালা ছিল। কক্ষের চারদিকে রেলিং ছিল। সর্বোচ্চ কক্ষে বাতিঘরটি প্রজ্জ্বলন করা হতো। ১৯ মাইল দূর থেকে নাবিকরা এ বাতিঘর থেকে আলো প্রত্যক্ষ করে দিক চিহ্নিত করতো। শংখ নদীর তীব্র স্রোতের তোড়ে বাতিঘরটি ধ্বংস হতে থাকে। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে বাতিঘরটি পুরোপুরি ধ্বংস হলে গভীর সমুদ্রে চলাচলরত নাবিক ও মাঝিমাল্লাদের কথা মাথায় রেখে তদানীন্তন সরকার ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে একই এলাকায় অর্থাৎ এর দু’কিলোমিটার পূর্বে বাঁধের ভেতরে প্রায় সাত একর জমিতে আরো একটি বাতিঘর নির্মাণ করে। বাতিঘরের সাথে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য একটি রেস্ট হাউস ও দু’টি আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে পুনঃ নির্মিত বাতিঘরটি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় মেয়াদোত্তীর্ণ এসব স্থাপনা জরাজীর্ণ অবস্থায় কালের নীরব সাক্ষী হিসেবে এখনো সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ায় অযত্ন, অবহেলা অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে। কুতুব আউলিয়ার উত্তরসূরি হযরত শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবী (রাঃ) এর মাজার শরীফের অসংখ্য ভক্ত প্রায় প্রতিদিন কুতুবদিয়া সফর করে থাকেন। কুতুবদিয়া সফরের প্রাক্কালে ঐতিহাসিক বাতিঘরের অস্তিত্ব সন্ধানের জন্য পর্যটকদের ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।


সেন্টমার্টিন
সেন্টমার্টিন
টেকনাফ থানা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি. সমুদ্র গর্ভে মনোরম দ্বীপ সেণ্ট মার্টিন। প্রায় ১৬ বর্গ কি.মি. জুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা, সমুদ্র তীরে সারি সারি নারিকেল বৃক্ষ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি আর এখানকার আদিবাসীদের বিচিত্র জীবনযাপন- সব মিলিয়ে পর্যটকদের আগ্রহ জাগানিয়া উপাদানের বিন্দুমাত্র অভাব নেই।
দ্বীপে পা দিয়েই বুঝতে পারবেন এটিকে নিয়ে মানুষ কেন এত মাতামাতি করে, আর কেনইবা একে বলা হয় সুন্দরের লীলাভূমি। বাংলাদেশে যতগুলো উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকা রয়েছে সেন্ট মার্টন তার মাঝে অন্যতম ও নান্দনিক। দ্বীপটি দৈঘ্যে প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থে কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। সেন্ট মার্টিনের পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর। দ্বীপের শেষ মাথায় সরু লেজের মত আর একটি অবিচ্ছিন্ন দ্বীপ রয়েছে যার নাম ছেঁড়াদ্বীপ।
সেন্টমার্টিনের অধিবাসীরা প্রায় সবাই জেলে। শুটকি তাদের প্রধান ব্যবসা। কিছু কৃষক পরিবার এখানে ধান, ডাল, শাক সব্জী উৎপন্ন করে। এ ছাড়া পর্যটন শিল্পের সাথে বহু স্থানীয় মানুষ জড়িত রয়েছে। এই দ্বীপের বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় চার হাজার। বর্তমানে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, থানা-ফাঁড়িসহ নানান স্থাপনা গড়ে উঠেছে। দ্বীপের সমুদ্র ঘেঁষে একপাশে আছে কচ্ছপের হ্যাঁচারি।
এটি সত্যিই একটি ভিন্ন প্রকৃতির দ্বীপ। অসংখ্য নারিকেল গাছ, কেয়া গুল্ম আর সবুজ বনানী এই দ্বীপকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পুরো দ্বীপ ঘুরলে মনে হবে নারিকেল বাগান এটি। আপনি চাইলে অর্থের বিনিময়ে তৃষ্ণা মেটাতে পারেন নারিকেল জলে। এর একদিকে যেমন প্রবাল প্রাচীর ঘিরে রেখেছে, অন্য দিকে বালুকাময় সৈকত প্রহর গুনছে আপনার অপেক্ষায়। সৈকতের অজস্র লাল কাঁকড়া আপনাকে নিঃসন্দেহে আকৃষ্টে করবে। অবচেতন মনেই আপনি কুড়িয়ে নিবেন বিভিন্ন রকম নুড়ি পাথর আর ঝিনুক। আর অযুত নিযুত সি গালের ওড়াউড়ি তো আছেই আপনার মন মাতাতে।
যেভাবে যেতে হবে-
অনেক ভাবেই পৌছানো যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এখানে যেতে হলে প্রথমেই যেতে হবে টেকনাফ জাহাজ ঘাটে। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার থেকে বাস বা মাইক্রোবাসে করে যাওয়া যাবে ৯ কিমি.। টেকনাফের জাহাজ ঘাটে গিয়ে আপনাকে সী ট্রাকের টিকেট কাটতে হবে। টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিনের দুরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। শীতের মৌসুমে সাগর শান্ত থাকে তাই এই সময় এখানে যাওয়া অনেক বেশী নিরাপদ। এই পর্যটন মৌসুমে এখানে টেকনাফ হতে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত কেয়ারী সিন্দবাদ সহ বেশ কয়েকটি সী-ট্রাক চলাচল করে। সকাল ১০ টায় এই নৌযানটি সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং বিকাল ৩ টায় ফিরে আসে। তবে এছাড়াও ট্রলার ও স্পীড বোটে করে যাওয়া যায় সেন্ট মার্টন। সী ট্রাক গুলো এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলাচল করে। এর পর বৈরি আবহাওয়ার কারনে প্রশাসন এদের চলতে দেয়না। এছাড়া বি.আই.ডব্লিও.টি.সি এর সি ট্রাকসহ আরও দু একটি আধুনিক জলযান চলে এ পথে। এতে জনপ্রতি ভাড়া ১৫০-২৫০ টাকা। সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে গেলে অবশ্যই আগে থেকে হোটেল নিশ্চিত করে যাওয়া ভালো।
ধীরে-সুস্থে প্রায় এক ঘণ্টায় পুরো দ্বীপ বেড়িয়ে আসা যাবে। বাজারের কাছে ছোট ভ্যানগাড়িতে পুরো দ্বীপ বেড়িয়ে আসতে লাগবে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। দ্বীপটি জমজমাট থাকে মাঝরাত অবধি। দিনে এসে দিনে যেতে চাইলে তাড়াতাড়ি করে খেয়ে সমুদ্রসৈকতে যেতে হবে। কারণ বেলা তিনটায় সব জাহাজ টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়। আর শতভাগ সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে চাইলে থেকে যেতে পারেন। পর্যটকদের সেই সুবিধা দেওয়ার জন্য বেশ কিছু হোটেল গড়ে উঠেছে। স্থানীয় লোকজনের কাছেই প্রাসাদ প্যারাডাইস, হোটেল অবকাশ, প্রিন্স হেভেন, ব্লু মেরিন, সি-ভিউসহ বিভিন্ন হোটেলের খবর পেয়ে যাবেন।

হারবাং
হারবাহং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে ৪৪ মাইল দূরে অবস্থিত হারবাং কক্সবাজার জেলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে নাগানকান্ডি নামক জনৈক আরাকান সামন্ত  হারবাং এলাকায় এসে অবস্থান নিয়েছিলেন। নাগানকান্ডির মৃত্যুর পর তার ছেলে কিবেরিং  মাতৃভূমি উদ্ধারের প্রয়াসে হারবাং এলাকায় থেকে একটি সেনাদল গঠন করেন। কিন্তু রাজস্ব আদায় ও রাজনীতিক মতপার্থক্যের কারণে কিবেরিং এর সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানির মতবিরোধ শুরু হলে কিবেরিং হারবাং ত্যাগ করে আরাকান চলে যান। ষষ্ঠদশ শতকে পুর্তগিজরা  হারবাংসহ কক্সবাজারের একটি বিরাট অংশ দখল করে নেয় এবং হারবাং এলাকায় একটি শক্তিশালী দূর্গ স্থাপন করে। পর্তুগিজ জলদস্যুরা এখানে স্থাপিত ঘাটি হতে সামুদ্রিক জাহাজসমূহে লুটতারাজ চালাত। মধ্যযুগের কবি লেখিয়েদের ভাষায় পর্তুগিজরা হারমাদ বলে পরিচিত ছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হারবাং দখল করে নেয়।


ছেঁড়াদ্বীপ
টেকনাফ উজেলার অধিক্ষেত্রভূক্ত বঙ্গোপসাগরের মাঝে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ছেড়া দ্বীপ নামের এ ছোট্ট ভূ-বিন্দুটি অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত ভূখণ্ড। জোয়ারের সময় সেন্টমার্টিন হতে দ্বীপটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি স্থানীয় লোকদের নিকট ছেড়াদিয়া নামেও পরিচিত। ছেড়া শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্ন এবং দিয়া শব্দের অর্থ দ্বীপ। জোয়ারের সময় বিন্দু-দ্বীপটি মুল-দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে বিচ্ছন্ন বা  ছিড়ে যায়। তাই দ্বীপটির নাম হয় ছেড়াদ্বীপ বা ছেড়াদিয়া। এ দ্বীপে কোন মানুষ বসবাস করেন না। জেলেরা দিনের বেলা মৎস্য আহরণ করে এবং  রাতে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করে। ছেঁড়াদিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাঁচস্বচ্ছ জলকেলি। এ দ্বীপের চারিদিকের জল এত স্বচ্ছ যে, অনেক গভীরে অবস্থানরত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, প্রবাল ও সামুদ্রিক শৈবাল খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায়। এমন অপূর্ব দৃশ্য অবলোকনের সুযোগের জন্য ছেঁড়া দ্বীপ পর্যটকদের নিকট অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত।


সোনাদিয়া দ্বীপ
সোনাদিয়া দ্বীপ
মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ স্বর্ণালী ঐশ্বর্যের প্রাকৃতিক আলেখ্য। ছোট এ দ্বীপটি একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সোনা শব্দের অর্থ স্বর্ণ এবং দিয়া শব্দের অর্থ দ্বীপ বা বসতিখণ্ড। সৃষ্টির পর জনবসতির সূচনালগ্ন থেকে দ্বীপটি প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরান বিভবের উৎস হিসেবে সুপরিচিত ছিল। উর্বর মাটিতে বীজ রোপন করলে বেরিয়ে আসতো রাশি রাশি ধান-সোনালি ছড়া। সমুদ্রে মৎস্য বা রূপোলি সোনার অশেষ সমৃদ্ধি চোখ ধাঁধিয়ে দিত। দৈনন্দিন জীবনে অত্যাবশ্যক লবণ উৎপাদনের জন্যও সোনাদিয়া এশিয়া মহাদেশে একসময় একনামে বিখ্যাত ছিল। দ্বীপটি সোনার মত মূল্যবান সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল বলে এর নাম হয় সোনাদিয়া। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বুকে বিখ্যাত দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর নিকটে সোনাদিযা অবস্থিত। মহেশখালী উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বুকে এক চমৎকার অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশে সোনাদিয়ার বিভবময় অবস্থান। সোনাদিয়া মেহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে অবস্থিত। একসময় ঘটিভাঙ্গা খাল দ্বারা মহেশখালী থেকে সোনাদিয়া বিচ্ছিন্ন ছিল। পরবর্তীকালে খালের ওপর সেতু নির্মিত হওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। সোনাদিয়াকে সরকার প্রতিবেশ সংকট এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। যাযাবর পাখির ভূ-স্বর্গ হিসেবে খ্যাত দ্বীপটি বিশ্বের বিভন্ন স্থান হতে আগত অতিথি পাখির কাকলীতে ছন্দোময় বন্দনার কলহাস্যে মূখরিত হয়ে উঠে। দ্বীপের পশ্চিমে বিস্তীর্ণ বালুকাময় সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ, সমুদ্র ও সূর্য স্নানের একটি আদর্শ স্থান। বালুকাবেলায় বিভিন্ন প্রকার ঝিনুক ও মুক্তার সমারোহ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এখানে প্রচুর মাছ শুকানো হয়। যা শুটকি বা ড্রাই ফিশ হিসেবে সারা দেশে খ্যাত।


মহেশখালী জেটি
মহেশখালীর উৎপত্তি দ্বীপ হিসেবে নয়। এটি কয়েকশ বছর আগেও মুল ভূখণ্ড কক্সবাজারের সাথে সংযুক্ত ছিল। ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপটি কক্সবাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট জেটি বা ৬নং জেটি ঘাট থেকে ১০-১২ মিনিটের মধ্যে বাঁকখালী ও বঙ্গোপসাগর মোহনা পাড়ি দিয়ে স্পীড বোট যোগে মহেশখালী মহেশখালী দ্বীপে পৌঁছা যায়। গাছের বোট দিয়ে কক্সবাজার জেটি থেকে মহেশখালী যেতে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। বিচ্ছিন্ন ও অনুনন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘদিন মহেশখালী ছিল কক্সবাজারের একটি পশ্চাৎপদ এলাকা। অধিবাসীদের পেশা ছিল শুধু পশুপালন, চাষাবাদ ও মৎস্য আহরন। অরণ্যবেষ্ঠিত দ্বীপটি হিংস্রজন্তু বাঘ, ভাল্লুক ও হাতির চারণভূমি হিসেবে দীর্ঘদিন অনাবাদি অবস্থায় পড়েছিল। পরবতীকালে আস্তে কিছু লোক মহেশখালী গিয়ে চাষাবাদ ও মৎস্য আহরণ শুরু করে। মহেশখালী জেটি নির্মিত হওয়ার আগে লোকজন মহেশখালী যাতায়াত ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। দ্বীপে কোন রাস্তা ঘাট ছিল না। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে মহেশখালী জেটি নির্মাণ করা হয়। ১৮২ পিলার বিশিষ্ট জেটিটির দৈর্ঘ্য ৬৯৫ মিটার ও প্রস্থ ৬ মিটার। বাঁকখালী খালের নাব্যতা ও ভরাটজাত কারণে জেটিটি কয়েকবার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। জেটি নির্মাণের পর মহেশখালীর জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থা আমুল পাল্টে যায়। এলাকার রাস্তাঘাট, বসতবাটি প্রভৃতি আধুনিকতার ছোঁয়ায় সানন্দময় হয়ে উঠে। যাতায়াত সাবলীল হওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। অধিবাসীদের পেশায় বৈচিত্র্য এবং সৃজনশীল আধূনিকতায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠে।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে রয়েছে :
মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎস্য বাজার
জেলার গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান
পাতাবাড়ী বৌদ্ধ বিহার
বড়ঘোপ সমূদ্র সৈকত
বড়ঘোপ সমূদ্র সৈকত
রাখাইন পাড়া
চৌফলদন্ডী-খুরুশকুল সংযোগ সেতু
কাকারা শাহওমর মাজার
মনোমুগ্ধকর গোলাপ বাগান
ডুলাফকির মাজার
চিংড়ি রপ্তানি জোন
লবণ রপন্তানি জোন
বার্মিজ মার্কেট
মাতামুহুরী নদী
মগনামা ঘাট
ইনানী সি বীচ
কানা রাজার সুড়ঙ্গ
মৎস্য খামার
অজ্ঞমেধা ক্যং
রাডার স্টেশন
হিমছড়ি
রামকোট বৌদ্ধ বিহার
শ্রী শ্রী রামকূট বৌদ্ধ বিহার
লামারপাড়া বৌদ্ধবিহার
রাবার বাগান
ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক
মথিনের কূপ
সেন্টমাটিন প্রবালদ্বীপ
মহেশখালী জেটি


Popular Posts