মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মলনে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন সার্ন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সতর্কও করেছেন। জানিয়েছেন, উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ নেই। এখনও অনেক পথ চলার বাকি। 
Tutorials Point
২০১২-এ হিসস বোসন খুঁজে পাওয়া পরে সার্ন-এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার কে দু’বছরের জন্য বন্ধ রাখা হয়। চলতি বছরের জুনে আবার সেখানে কাজ শুরু করেছে। এ বার কোলাইডার-কে আগের থেকে প্রায় দু’গুন শক্তিতে চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ৬.৫ ট্রিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্টে দু’টি প্রোটন বিমকে পরস্পরের বিপরীত মুখে ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। তার পরে ধাক্কা। সেই ধাক্কা থেকেই মিলতে পারে নতুন কণা। যেমন মিলেছিল হিগস বোসন।
আইনস্টাইনের ভর-শক্তির সূত্র ধরে যত বেশি জোরে (শক্তির) ধাক্কা লাগবে তত ভারী কণার সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি কোয়ান্টাম তত্ত্ব বলে, যত শক্তি ব্যয় হবে তত কণার জগতে আরও গভীরের ছবি পরিষ্কার হবে। এই কাজের জন্য প্রায় এক হাজার কোটি ডলার ব্যয় করে এই সার্ন-এর লার্জ হাইড্রন কোলাইডার তৈরি হয়েছে। ধাক্কার তথ্য বিশ্লেষণের জন্য রয়েছে প্রায় দু’টি ছ’তলা উঁচু কম্পিউটারের সমারোহ। দু’টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। একটির নাম অ্যাটলাস। অন্যটি সিএমএস। এই দুই কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার পদার্থবিদ তথ্য বিশ্লেষণের কাজে জড়িয়ে আছে। এখনও পর্যন্ত কী পেলেন তাঁরা? কী নিয়ে এই উৎসাহ বিজ্ঞানী মহলে? প্রায় ৪ লক্ষ কোটি প্রোটন জোড়ের মুখোমুখি ধাক্কার তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা হঠাৎ অতিরিক্ত এক জোড়া গামা রশ্মির সন্ধান পেয়েছেন। শক্তি প্রায় ৭৫০ বিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্ট। পদার্থবিদদের ধারণা, কোনও তেজস্ক্রিয় কণার বিকরণে তৈরি এই গামা রশ্মি। হিগস বোসন পাওয়ার সময়েও এমন গামা রশ্মি পাওয়া গিয়েছিল। কী হতে পারে এই কণা? প্রাথমিক ভাবে নানা মুনির নানা মত। হতে পারে এই কণা আরও ভারী হিসগ বোসন। হতে পারে গ্রাভিটন। কোয়ান্টম তত্ত্বে মাধ্যাকর্ষকে বয়ে নিয়ে যায় গ্রাভিটন। এতে আবার দেশ-কালের তত্ত্বে আরও একটি মাত্রা জুড়তে হবে। আবার এমন কণাও হতে পারে যার হিসেব এই প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’-এ নেই। তা হলে একে বিপ্লব বলতে বিজ্ঞানীদের আপত্তি থাকবে না। পদার্থবিদদের আবার নতুন করে ভাবতে বসতে হবে। যদিও এই কাজটিই পদার্থবিদদের সব চেয়ে পছন্দের। কিন্তু কেন এখনই উচ্ছ্বসিত হতে বারণ করেছে সার্ন? কারণ, এই হিসেব বড় সূক্ষ্ণ। কোথাও ভুলচুক থেকে যেতেই পারে। অ্যাটলাস থেকে পাওয়া তথ্য রাশিতত্ত্বের হিসেবে ৯৩ বারের মধ্যে এক বার ভুল হতে পারে। কিন্তু পর্যবেক্ষণ ঠিক হতে গেলে তাকে ‘ফাইভ সিগমা’-এর মাপকাঠি ডিঙতে হবে। যেখানে ভুল হওয়ার আশঙ্কা ৩৫ লক্ষ বারের মধ্যে এক বার। তথ্য যত বাড়ে তত ভুল হওয়ার আশঙ্কা কমে। কিন্তু আশার কথা হল প্রায় একই জিনিস পেয়েছে সিএমএস-ও। ইতিহাস বলে সার্ন-এ এ ভাবেই প্রথমে হিগস বোসনের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। প্রাথমিক ইঙ্গিতের ছ’মাস পরে তাঁকে আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করে সার্ন। এ বারও কি তাই হবে? আরও তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়েছে। সেই ফলের জন্য অধীর প্রতীক্ষায় বিজ্ঞানী মহল।
সংকলিত। 

Popular Posts