ফ্রীলান্সিং আপনার জন্য নয়। শুনে হতাশ হলেন। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে ফ্রীলান্সিং আপনার জন্য নয়। আমি আপনাকে হতাশ করছি না, কিন্তু আমি চাইলেও সবাইকে উৎসাহিত করতে পারি না, কিন্তু যাদের মধ্যে আসলেই ইচ্ছা আছে কাজ করার, ইচ্ছা আছে ধৈর্য নিয়ে কাজ শেখার, পরিশ্রম করার আর সর্বোপরি নিজের জ্ঞানকে বর্তমান প্রযুক্তি দুনিয়ার সাথে আপ টু ডেট রাখার- তাদেরকেই এই লাইনে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা উচিত।

এই পর্ব টি ভাল ভাবে বুঝতে হলে ফ্রিলেন্সিং বিস্তারিত পর্ব ১  পড়ে নিতে পারেন।

অনলাইনে কাজ করে আয় করাটা একেবারে সোজা কাজ না যে, যেই আসবে টাকা কামাবে। এই পেশায় আসার আগে নিজেকে বারবার প্রশ্ন করুন আপনি কি আদৌ কম্পিউটার-ইন্টারনেট আর বর্তমান প্রযুক্তিকে ভালবাসেন? কারণ মন থেকে ভাল না বাসলে কখনই আপনি এখানে সফলতার মুখ দেখতে পারবেন না। যারা এখন প্রতিষ্ঠিত অনলাইন ফ্রিলেন্সার হিসেবে তারা কি পরিমাণ কষ্ট করে এখানে এসেছেন সেটা একবার জেনে নিবেন। সারাদিন-রাত টানা কম্পিউটার নিয়ে পড়ে ছিলেন না, এমন লোক কেউ খুঁজে পাবেন না। আগে প্রশ্ন করুন আপনি নিজে এসব করতে পারবেন? নাকি আপনার বন্ধু, বড়ভাই কি সব কাজ করে ডলার ইঙ্কাম করছে, ব্যস আপনি দেখলেন আর আপনিও করবেন; কাজ করার জন্য কি পরিমাণ ত্যাগ-তিতিক্ষা করা লাগবে এসব না জেনে, না বুঝেই।  তাই আবারো বলছি আগে একটু নিজেকে রিসার্চ করে নিন আপনি কি এই কাজে ফিট কি’না।

যেভাবে বুঝবেন আপনি কি ফ্রিলেন্সিং কাজ করার জন্য যোগ্য কিনা?
অনেকেই আছেন যারা ফ্রিলেন্সিং কাজে  অন্যদের থেকে অনেক বেশী পারদর্শী। আপনাকে আগে জানতে হবে আপনি কি ফ্রিলেন্সিং কাজ করতে প্রস্তুত কিনা অথবা ফ্রিলেন্সিং পেশায় সংযুক্ত হতে যা যা লাগবে আপনার সেসব যোগ্যতা আছে কিনা। আপনি ফ্রিলেন্সিং কাজ করতে পারবেন কিনা তা জানতে আপনি নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন এবং আপনার ভেতর থেকে সেসবের যে উত্তর আসবে তাতেই আপনি বুঝবেন আসলে আপনার জন্য ফ্রিলেন্সিং পেশা কতটা যুক্তিযুক্ত।
১। আপনি অনিশ্চয়তা সঙ্গে থাকতে পারবেন?
একজন ফ্রিলেন্সারের পেশা হচ্ছে অনিশ্চয়তায় ভরা। এখানে কোন দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি থাকেনা কাজ আসবে কাজ করবেন পেমেন্ট পাবেন। একজন ক্লায়েন্ট আপনার টাকা না দিয়ে কাজ ফিরিয়ে নিতে পারে হটাৎ করেই। আপনি এখানে দিনের পর দিন কাজ করে যাবেন ঠিক সময় টাকা পাবেন কি পাবেন না এমন অনিশ্চয়তার মাঝে। তারপরও আপনাকে নিজের সাথে নিজেকে ওয়াদা করতে হবে আপনি কাজ ছেড়ে যাবেন না। সব পেশায় লেগে থাকাটা একটা বড় গুন। ফ্রিলেন্সিং পেশায় আপনাকে অনিশ্চয়তার মাঝে লেগে থাকতে হবে। আপনাকে তাই করতে হবে যা আপনার ক্লায়েন্ট চায়, এর সামান্য তম এদিক সেদিক হলে আপনি টাকা পাবেন কিনা সে বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই। অতএব আপনি ঠিক করুন আপনি কি ফ্রিলেন্সিং পেশায় আসতে প্রস্তুত?
২। আপনি কি স্ব-নিয়ন্ত্রক?
ফ্রিলেন্সিং পেশায় আপনাকে কেউ তাগাদা দিবেনা যেভাবে অন্য সব পেশায় আপনাকে টাইম টু টাইম কাজের তাগাদা দেয়া হবে। ফ্রিলেন্সিং এ আপনি যখন একটি কাজের দায়িত্ব নিবেন সে কাজ নির্দিষ্ট সময়ে ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে দিতে হবে আপনাকেই। সময়ের এদিক সেদিক হেরফের আপনার নির্দিষ্ট পেমেন্ট পাওয়াতে অনিশ্চয়তা অথবা ভাল ফিডব্যাক পেতে সমস্যা করতে পারে।
৩। আপনি কি গোছানো? ফ্রিলেন্সিং পেশা এমন একটি পেশা এখানে অগোছালো ভাবে কোন কাজ করা যায়না। একজন ভাল ফ্রিলেন্সার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হলে কখন কি প্রয়োজন এবং ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করার মানসিকতা।
৪। আপনাকে প্রতিনিয়ত পড়ালিখার মাঝে থাকতে হবে।
আপনি কি সব সময় জানার মাঝে নিজেকে নতুন নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত করিয়ে নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আপ-টু-ডেট রাখতে পারবেন?   প্রকৃতিগত ভাবেই ফ্রিলেন্সিং পেশাটি একটি ডায়নামিক পেশা। ফ্রিলেন্সিং পেশায় আপনাকে সব সময় নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞান ও ধারণা রাখতে হবে তা না হলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন।
৫। আপনি কি প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে অভস্থ হতে পারবেন?
ফ্রিলেন্সিং পেশা এমন একটি পেশা এখানে সব সময় ট্রেন্ড পরিবর্তিত হচ্ছে। আপনি যদি পরিবর্তনের সাথে তাল মিলাতে না পারেন তবে ফ্রিলেন্সিং পেশায় এসে আপনাকে নতুন চেলেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।
৬। আপনি কি সবার সাথে ভালো যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন?
কাজ পেতে হলে এবং ক্লায়েন্টের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই একজন ভালো যোগাযোগ রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করতে হবে, তা যদি না পারেন তবে আপনি সমস্যায় পড়বেন।
৭। আপনি কি অপ্রীতিকর মানুষের সঙ্গে আপ করতে পারেন?
ফ্রিলেন্সিং এমন একটি পেশা এখানে সম্পূর্ণ পরিচিত মানুষের সাথে আপনার কাজ করতে হবে কে কেমন কার মানসিকতা কেমন তা কিছুই বুঝা যায়না। অনেকেই হয়ত আপনার সাথে খুবি খারাপ ধরণের ব্যবহার করতে পারেন। আবার অনেকে আপনার সাথে সোজা সাপ্টা ব্যাবহার করবে। ফ্রিলেন্সিং করতে হলে এখানে সব ধরণের ব্যাবহারের সাথে অভস্থ হয়ে কাজ করে জাতে হবে।
এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন আপনাকে দিয়ে কি ফ্রিলেন্সিং পেশায় ভালো কিছু করা সম্ভব?

অনলাইনে আয় করার জন্য আপনার যে জিনিস গুলোর একান্তই প্রয়োজন হবে সেগুলো হলঃ
১.  কম্পিউটার ও ইন্টারনেট কানেকশন ( এই দুই টা ছাড়া ১০০% অসম্ভব )
২.  নতুন যে কোন কিছু শিখার ইচ্ছা ও খুব তাড়াতাড়ি কিছু শিখে নিতে পারা
৩. কঠোর পরিশ্রম করার মনোবল
৪. কোন বেপারে বারবার ব্যর্থ হলেও তা শেখার চেস্টা করে যাওয়া।
৫. আপনাকে প্রতিনিয়ত পড়ালিখার মাঝে থাকতে হবে।
৬. ভাল ইংরেজি জানতে হবে। ভাল বলতে ও শুনে বুঝতে পারতে হবে। ( যারা কাজ দেয় তারা ৯৫% বিদেশী )
৭. ২/৩ বছর লেগে থাকাতে হতে পারে
৮. আরও অনেক কিছু যা সময়ের সাথে আপনি নিজেই জেনে যাবেন।

নতুন দের কিছু কমন প্রশ্ন, উত্তর এবং অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে থাকবে ফ্রিলেন্সিং বিস্তারিত পর্ব ৩

আসলে সব কথার এক কথা এটাই যে যদি কেউ নিজেকে স্মার্ট কাজের উপযুক্ত মনে করে আর সেজন্য যথেষ্ট পরিমাণ শ্রম দিতে পারবেন এমন যে কেউ এখানে আসতে পারেন। অনলাইনে কাজ করে টাকা ইনকাম করা চাট্টিখানি কথা না, সবখান থেকে এভয়ডেড হয়ে এখানে আসার চিন্তা করলে হবেনা। এখানে যারা নিজ যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত তারা সমাজের অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তির চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।
নিজেকে প্রতি মুহূর্তে শেখার জন্য প্রস্তুত রাখা, নিজেকে ভালভাবে রিপ্রেজেন্ট করা এবং আরও অনেক ভাল কাজ করার মনমানুষিকতা থাকতে হবে। সবশেষে কথা একটাইঃ ফ্রিলেন্সিং ইজ আ সিরিয়াস বিজনেস!

বিঃদ্রঃ উপরের কথাগুলো আমার নিজের নয়। কাজ করতে গিয়ে প্রতিমুহূর্তে শিখছি আর বড়রা যা বলেছেন সেগুলই আমার নিজের মত করে লিখেছি। আমি কিছুই জানি না এখনও... প্রতিমুহূর্তে শিখে চলেছি। এই লেখায় অনেক ভুল থাকতে পারে, আশা করছি ধরিয়ে এবং শুধরিয়ে দিবেন। নতুন কিছু শেখার প্রচণ্ডরকম তীব্র আকাংখা আছে, আমার আশেপাশের কিছু মহৎ মানুষদের সানিদ্ধে থেকে পথ চলছি নিজস্ব গতিতে।

Popular Posts