অনলাইন ফ্রিলেন্সিং ব্যাপারটা বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকটা মুড়ির মোয়ার মত । সবাই করছে... আমিও করি—এই টাইপের।  আমরা বাঙালি জাতি অনেকটাই হুজুগে বাঙালি। কিন্তু অনলাইনে কাজ করে টাকা কামানোর ব্যাপারটা হুজুগের না । যাদের মধ্যে আসলেই ইচ্ছা আছে কাজ করার, ইচ্ছা আছে ধৈর্য নিয়ে কাজ শেখার, পরিশ্রম করার আর সর্বোপরি নিজের জ্ঞানকে বর্তমান প্রযুক্তি দুনিয়ার সাথে আপডেট রাখার- তাদেরকেই এই লাইনে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করছি।

আজকের পর্ব টি ভালভাবে বুঝার জন্য
ফ্রিলেন্সিং বিস্তারিত পর্ব ১
ফ্রিলেন্সিং বিস্তারিত পর্ব ২
পড়ে নিতে পারেন ।

নতুনদের কিছু কমন প্রশ্নের উত্তরঃ

কিভাবে শুরু করবো ?

আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন আপনি কোন কাজ ভাল পারেন কিংবা শুরু করতে চাইলে কয়েকটা জিনিসের উপর নজর দেন যেমন,আপনার আগ্রহের ব্যাপার কি,কি ধরনের কাজে আপনি মজা পান,আপনার নিজের কোনও স্কিল আছে কি’না। এসব মার্ক করে আর কাজের ধরনের উপর কিছু রিসার্চ করে বের করুন আপনার জন্য সঠিক সেক্টর।

ইংলিশ লেভেলঃ

যেহেতু অনলাইনের ফ্রিলেন্সিং করবেন তাই আপনাকে সব কাজ আর যোগাযোগ অনলাইনেই করতে হবে। আর সেখেত্রে অবশ্যই এবং অবশ্যই আপনাকে ইংলিশ ভাল জানতে হবে। দরকার হলে প্রতিদিন ইংলিশ চর্চা করুন। নিজের শব্দভাণ্ডার ভারি করে তুলুন।
ভাল কমুনিকেশন স্কিল না থাকলে এবং ক্লাইন্টের সাথে ভাল ভাবে যোগাযোগ রক্ষা না করতে পারলে বেশিদিন টিকে থাকা অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে।

কোথায় কাজ শিখবোঃ

অভিজ্ঞরা সব সময় এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন Google. আমিও তাই বলছি। আপনার মনে যা প্রশ্ন আসে আপনি নিশ্চিন্তে গুগলের সার্চ বক্সে লিখে দিন। বিশ্বাস করুন আপনি বেশি বৈকি কম শিখবেন না।
অনেকেই বলেন গুগল সার্চ করে ভাল কিছু পাচ্ছেন না। হ্যাঁ হয়তো আপনি ঠিকভাবে সার্চ করতে পারছেন না কিন্তু তাই বলে থেমে থাকবেন না কারণ এডভান্স গুগল সার্চ করা অভিজ্ঞতার বিষয়। কয়েকদিন ভাল ভাবে সার্চ করতে করতে দেখবেন আপনি খুব ভাল সার্চ রেজাল্ট পাচ্ছেন। দরকার পড়লে কিভাবে এডভান্স সার্চ করতে হয় এটাও গুগল থেকে জেনে নিন।

কাজের জন্য টিউটোরিয়াল কোথায় পাবো ?

টিউটোরিয়াল খোঁজার জন্য আপনি অবশ্যই সবার আগে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে গুগলকে জিজ্ঞেস করবেন।
বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে , তবে ভিডিও টিউটোরিয়ালের জন্য ইউটিউব হচ্ছে বেস্ট। এখানে আপনি সব ধরনের কাজের সব টিউটোরিয়াল পাবেন। বর্তমানে আমাদের দেশের বেশ কিছু ভাল মনের মানুষ বাংলায় টিউটোরিয়াল বানিয়ে এখানে ফ্রি দিয়েছেন আমাদের শেখার জন্য। এসবের যথোপযুক্ত ব্যাবহার করতে শিখুন।

ট্রেইনিং সেন্টারে যাব কি ?

অনেকেই কাজ শেখার জন্য ট্রেইনিং সেন্টারের খোঁজ জানতে চান। দেশে অনেক সেন্টার আছে যেখানে ৩ মাস বা ৬ মাসের কোর্স করানো হয়। তবে আমার অনুরোধ থাকবে আগে নিজে নিজে শিখার চেষ্টা করুন। আপনি বেসিকটুকু জেনে থাকলে ওই ট্রেইনিং সেন্টারগুলো থেকে এডভান্স কোর্স করে নিতে পারেন।

কাজ কিভাবে পেতে পারি ?

কাজ কিভাবে পাবেন তার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি কাজ পারেন বা আপনি কি কাজ পাওয়ার যোগ্য? যদি এই দুইটা প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে আপনি অনলাইনে যেকোনো মার্কেটপ্লেস এ কাজ করতে পারবেন। মার্কেটে কাজ করার জন্য শুধু কাজ পাওয়াটাই মুখ্য ব্যাপার না, আসল পরীক্ষা হচ্ছে আপনার কাজ সুন্দর ভাবে শেষ করে আপনার ক্লাইন্ট/কোম্পানিকে সন্তুষ্ট করা।

কয়েকটা মার্কেটপ্লেসের নাম হলো :
www.upwork.com,
www.fiverr.com,
www.freelancer.com,
www.elance.com,
www.peopleperhour.com,
www.99Designs.com

এছারাও আরও অনেক মার্কেট প্লেস আছে।
এর মধ্যে যেকোনো একটা মার্কেটপ্লেস এ বা একাধিক মার্কেটপ্লেস অ্যাকাউন্ট খুলে আপনি কাজ শুরু করতে পারেন। অ্যাকাউন্ট খুলার আগে ঐ মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে খুব ভাল করে জেনে নিবেন। আর একটু কষ্ট করে গুগল সার্চ করে দেখলেই সব ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন। অযথা না জেনে ভুলেও অ্যাকাউন্ট করবেন না।

এছাড়া আপনি যদি নিজেকে অনেক দক্ষ মনে করেন তাহলে আপনি চাইলে আপনার কাজ কে বিক্রি করতে পারেন। কাজ বিক্রি করার এমন একটি মার্কেটপ্লেস হচ্ছে www.envato.com .
মনে রাখবেন কাজ পাওয়া টা আপনার দক্ষতার ওপরে নির্ভর করে।

অভিজ্ঞদের পরামর্শঃ

অনলাইনে বিভিন্ন সেক্টরে যারা অনেক ভালভাবে নিজের ক্যারিয়ার সাজিয়েছেন তাদের সবাই সার্ভিস বেজড কাজের তুলনায় প্রোডাক্ট বেজড কাজকে অনেক বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাই এখন যারা অনলাইনে ফ্রিলেন্সার হিসেবে কাজ করছেন তাদের সবার উচিৎ নিজেদের প্রোডাক্ট ডেভেলপ করে বিভিন্ন মার্কেটেপ্লেসে উপস্থাপন করা।

সাধারণ ওয়েব ডেভেলপিং করে কাজ পাওয়া এখন অনেক টাফ একটা ব্যাপার, আবার শুধু বেসিক ফটোশপ জ্ঞান নিয়ে গ্রাফিকের কাজ বেশিদূর আগানো সম্ভব না।  তাই যে সেক্টরেই কাজ করতে হবে একেবারে পাকাপোক্ত হয়ে কাজ করতে হবে।

Freelancing Is A Serious Business

 উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারঃ
( এই পয়েন্ট এর অনেক কিছুই আপনি নাও বুঝতে পারেন। অনলাইনে কি কি কাজ পাওয়া যায় বা আপনি কি কি কাজ করতে পারেন এই সব বিষয় নিয়ে থাকবে ফ্রিলেন্সিং বিস্তারিত পর্ব ৪  )

ইদানিং কালে এন্ড্রয়েড অ্যাপস নিয়ে অনেক ভাল কাজ হচ্ছে আর এটার ফিউচার বেশ ভাল। আইওএস, মোজিলা ওএস নিয়েই অনেক ভাল কাজ করছেন আমাদের দেশের অনেক এক্সপার্ট তরুন প্রোগ্রামাররা। এই সব কাজের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান যুগে ডেস্কটপ সফটওয়্যারের সাথে মোবাইল অ্যাপস গুলোর চাহিদাও অনেক বেশি পরিমানে বেড়েছে।
আবার গ্রাফিক ডিজাইন ছাড়া এসবের চিন্তাও করা যাবেনা।

ইন্টারনেট মার্কেটিং এবং এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে আরেক সম্ভাবনাময় সেক্টর! অনেক ভাল ক্যারিয়ার হতে পারে অনলাইন বেজড বিজনেস এবং মার্কেটিং ক্যারিয়ার। একটা সাইট নিয়ে গুগলের অ্যাডসেন্স কিংবা অ্যামাজনের এফিলিয়েট করে মাসে স্ট্যাবল একটা আরনিং সোর্স তৈরি করা যায়। সেই সাথে পেইড মার্কেটিং করেও বেশ ভাল আরনিং করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওয়ার্ডপ্রেস, মেজেন্টো, জুমলাসহ সকল ধরণের ওয়েব ডেভেলপমেন্ট- ওয়েব ডিজাইন এসবের চাহিদা কোনোদিন কমবে কিনা সেটা জানা নেই, তাই এই কাজে পারদর্শী যে কেউ করে নিতে পারেন নিজের ক্যারিয়ার।

সবশেষেঃ

আসলে সব কথার এক কথা এটাই যে যদি কেউ নিজেকে স্মার্ট কাজের উপযুক্ত মনে করে আর সেজন্য যথেষ্ট পরিমাণ শ্রম দিতে পারবেন এমন যে কেউ এখানে আসতে পারেন। অনলাইনে কাজ করে টাকা ইনকাম করা চাট্টিখানি কথা না, সবখান থেকে এভয়ডেড হয়ে এখানে আসার চিন্তা করলে হবেনা। এখানে যারা নিজ যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত তারা সমাজের অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তির চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।
নিজেকে প্রতি মুহূর্তে শেখার জন্য প্রস্তুত রাখা, নিজেকে ভালভাবে রিপ্রেজেন্ট করা এবং আরও অনেক ভাল কাজ করার মনমানুষিকতা থাকতে হবে। সবশেষে কথা একটাইঃ ফ্রিলেন্সিং ইজ আ সিরিয়াস বিজনেস!


বিঃদ্রঃ উপরের কথাগুলো কাজ করতে গিয়ে প্রতিমুহূর্তে শিখছি আর বড়রা যা বলেছেন সেগুলই আমার নিজের মত করে লিখেছি। আমি কিছুই জানি না এখনও... প্রতিমুহূর্তে শিখে চলেছি। এই লেখায় অনেক ভুল থাকতে পারে, আশা করছি ধরিয়ে এবং শুধরিয়ে দিবেন। নতুন কিছু শেখার প্রচণ্ডরকম তীব্র আকাংখা আছে, আমার আশেপাশের কিছু মহৎ মানুষদের সানিদ্ধে থেকে পথ চলছি নিজস্ব গতিতে।

Popular Posts